ইন্ডিগো সংকটের মেঘ কাটছে! বাতিল ফ্লাইট কমছে, সময়ানুবর্তিতা বাড়ছে - যাত্রী দুর্ভোগের অবসান?
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইন্ডিগো (IndiGo) এয়ারলাইন্স যে চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, তার মেঘ কিছুটা কাটতে শুরু করেছে। তীব্র পাইলট এবং ক্রু সংকটের জেরে শত শত ফ্লাইট বাতিল, যাত্রী দুর্ভোগ, এবং সময়ানুবর্তিতার (On-Time Performance - OTP) রেকর্ড পতনের পর, বিমান সংস্থাটি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইন্ডিগোর ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং তাদের সময়ানুবর্তিতা ক্রমশ উন্নতি লাভ করছে।
সংকটের প্রেক্ষাপট: হঠাৎ কেন এই বিপর্যয়?
ইন্ডিগোর এই সাম্প্রতিক সংকটের মূল কারণ ছিল একযোগে বহু পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের অসুস্থতাজনিত ছুটি (sick leave) নেওয়া। এর পেছনে কর্মপরিবেশ, ছুটির অভাব এবং বেতন সংক্রান্ত অসন্তোষের অভিযোগ উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে বিমান সংস্থাটি একদিনে প্রায় ৯০ থেকে ১০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল, যার ফলে হাজার হাজার যাত্রী বিপাকে পড়েছিলেন। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (Indira Gandhi International Airport) থেকে শুরু করে মুম্বাই, ব্যাঙ্গালুরু এবং অন্যান্য প্রধান বিমানবন্দরগুলিতেও ইন্ডিগোর যাত্রীরা ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন।
ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন (DGCA) এই পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং ইন্ডিগোকে তাদের ফ্লাইট শিডিউল পুনর্বিন্যাস করার এবং যাত্রীদের যথাযথ পরিষেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, বিমান সংস্থাটিকে প্রতিদিনের বাতিল ফ্লাইট এবং বিলম্বের তথ্য DGCA-কে জমা দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল।
স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত: স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে যাত্রীরা
ইন্ডিগোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (CEO) পিটার এলবার্স (Pieter Elbers) এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, "আমরা আনন্দিত যে ইন্ডিগোর কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। আমাদের কর্মীরা এই কঠিন সময়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং আমরা যাত্রীদের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।"
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ইন্ডিগোর ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সংখ্যা এখন মাত্র ২০-৩০টির মধ্যে নেমে এসেছে, যা অতীতের ১০০টিরও বেশি বাতিল হওয়া ফ্লাইটের তুলনায় অনেকটাই কম। একইসঙ্গে, তাদের সময়ানুবর্তিতাও আবার বাড়তে শুরু করেছে, যা যাত্রীদের জন্য এক বড় স্বস্তির খবর।
DGCA-এর নজরদারি এবং ইন্ডিগোর প্রতিক্রিয়া
DGCA ইন্ডিগোর ওপর কঠোর নজর রাখছিল এবং পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছিল। ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষও DGCA-এর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিল এবং তাদের পরিস্থিতি উন্নয়নের পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে অবহিত করছিল। জানা গেছে, ইন্ডিগো তাদের পাইলট ও কেবিন ক্রুদের কাজের চাপ কমানো এবং বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নিয়েছে, যা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ কমাতে সাহায্য করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ: আস্থা পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের প্রস্তুতি
যদিও ইন্ডিগো আপাতত সংকটের প্রাথমিক পর্যায় কাটিয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে, তবুও তাদের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
-
যাত্রীদের আস্থা পুনরুদ্ধার: বিপুল সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল এবং বিলম্বের কারণে অনেক যাত্রী ইন্ডিগোর ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়েছেন। এই আস্থা ফিরিয়ে আনা বিমান সংস্থাটির জন্য একটি বড় কাজ হবে।
-
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি: ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি যাতে আর না ঘটে, তার জন্য ইন্ডিগোকে শক্তিশালী অপারেশনাল পরিকল্পনা এবং কর্মীদের সন্তুষ্টির ওপর আরও বেশি জোর দিতে হবে।
যাই হোক, ইন্ডিগোর এই স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার খবরটি ভারতীয় বিমান শিল্প এবং যাত্রীদের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। আশা করা যায়, ইন্ডিগো অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য পরিষেবা দিতে সক্ষম হবে।
What's Your Reaction?
Like
0
Dislike
0
Love
0
Funny
0
Angry
0
Sad
0
Wow
0