গোয়ার নাইটক্লাবে মধ্যরাতে বিভীষিকা: সিলিন্ডার বিস্ফোরণের আগুনে পুড়ল ২৫টি তাজা প্রাণ, অগ্নিনিরাপত্তায় বড় গাফিলতির অভিযোগ!
গোয়ার উৎসবমুখর রাতের আনন্দ মুহূর্তের মধ্যে এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডিতে পরিণত হলো। রবিবার (৭ ডিসেম্বর, ২০২৫) মধ্যরাতে উত্তর গোয়ার আরপোরা গ্রামে (Arpora village) অবস্থিত জনপ্রিয় নাইটক্লাব ‘বার্চ বাই রোমিও লেন’ (Birch by Romeo Lane)-এ এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ফলে অন্তত ২৫ জন মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৬ জন, যাঁদের গোয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, বোম্বোলিমে (Bambolim) চিকিৎসা চলছে।
পানাজি: ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নাকি ফায়ারক্র্যাকার?
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শনিবার গভীর রাত ১টা নাগাদ ক্লাবের রান্নাঘরের কাছে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে, মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্তের সর্বশেষ বিবৃতি অনুসারে, অভ্যন্তরীণ তদন্তে বৈদ্যুতিক ফায়ারক্র্যাকার (Electric Firecrackers) থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগুন লাগার পর তা পাম পাতা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী কাঠামো এবং ক্লাবের ঘনবদ্ধ অভ্যন্তরে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে ভেতরের মানুষদের পালানোর কোনো সুযোগ ছিল না।
দমকল বাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও, আরপোরার সংকীর্ণ রাস্তা এবং পিছনের জলাশয়ের পাশে ক্লাবের অবস্থান হওয়ায় দমকলের গাড়ি প্রায় ৪০০ মিটার দূরে পার্ক করতে বাধ্য হয়, যা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ সময়সাপেক্ষ করে তোলে।
মৃত্যুর কারণ: দগ্ধ হওয়ার চেয়ে শ্বাসরোধ
গোয়া পুলিশের মহানির্দেশক অলোক কুমার নিশ্চিত করেছেন যে, নিহত ২৫ জনের মধ্যে অধিকাংশের মৃত্যু দগ্ধ হয়ে নয়, বরং ঘন ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, আগুন লাগার পর আতঙ্কিত অনেকে বেসমেন্ট বা নিচের তলার রান্নাঘরের দিকে ছুটতে শুরু করে, সেখানে কর্মীর সঙ্গে তাঁরাও আটকে পড়েন।
মৃতদের মধ্যে ১৯ জনই ছিলেন নাইটক্লাবের কর্মী। এছাড়া পাঁচজন পর্যটক (চারজন দিল্লি এবং একজন কর্ণাটক থেকে) নিহত হয়েছেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, তিন থেকে চারজন মহিলাও এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তা: গাফিলতি বরদাস্ত নয়
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি এই ঘটনাকে গোয়ার জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করেন। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে নাইটক্লাবটি অগ্নিনিরাপত্তার কোনো নিয়ম মানেনি।
মুখ্যমন্ত্রী সাওয়ান্ত ইতিমধ্যেই ঘটনার বিস্তারিত ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি কঠোরভাবে ঘোষণা করেন, ক্লাবের মালিকপক্ষ এবং যে সমস্ত সরকারি আধিকারিক নিয়ম লঙ্ঘন করে এই ক্লাবকে পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনার জন্য নাইটক্লাবের দুই মালিক এবং ইভেন্ট অর্গানাইজারদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে এবং চারজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত নিহতদের পরিবারের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার ঘোষণা করেছেন।
স্থানীয় বিধায়ক মাইকেল লোবো কালানগুট পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গোয়ার সমস্ত নাইটক্লাবে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার নিরীক্ষা (Fire Safety Audit) শুরু করার দাবি জানিয়েছেন। আরপোরা-নাগোয়ার পঞ্চায়েত প্রধান রোশন রেদকর জানান, ক্লাবটি নির্মাণের জন্য বৈধ অনুমতি ছিল না এবং পঞ্চায়েত থেকে ডিমোলিশন নোটিশ জারি করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা স্থগিত ছিল।
এই ঘটনা গোয়ার পর্যটন শিল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অবৈধ নির্মাণ নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
What's Your Reaction?
Like
0
Dislike
0
Love
0
Funny
0
Angry
0
Sad
0
Wow
0