সুকমায় আইইডি বিস্ফোরণে শহিদ পুলিশ আধিকারিক আকাশ রাও, মাওবাদীদের তাণ্ডবে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষতি বৃদ্ধি
ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার দোনদরা গ্রামে মাটির নিচে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে সহকারী পুলিশ সুপার আকাশ রাও গিরিপুঞ্জ শহিদ হয়েছেন। মাওবাদীদের এই নাশকতামূলক হামলায় তিনজন পুলিশ আধিকারিক আহত হয়েছেন। চলতি বছরে মাওবাদীদের হাতে নিহত নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা ১৮-এ পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে এই অঞ্চলে ব্যাপক অভিযান চালাচ্ছে। তবে মাওবাদীদের কার্যক্রম এখনও সক্রিয় থাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রয়েছে।

ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায় ফের মাওবাদীদের নাশকতামূলক কার্যক্রমে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য শহিদ হয়েছেন। মঙ্গলবার দোনদরা গ্রামে পায়ে হেঁটে টহল দিচ্ছিলেন কন্টা ডিভিশনের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আকাশ রাও গিরিপুঞ্জ। হঠাৎ মাটির নিচে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর আহত হন। সঙ্গে থাকা তিনজন পুলিশ আধিকারিকও আহত হন। আকাশকে দ্রুত এয়ারলিফট করে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বাকি আহতদের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।
মাওবাদীরা দীর্ঘদিন ধরে সুকমা ও আশপাশের এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ‘লালগড়’ নামে পরিচিত এই এলাকা মাওবাদীদের অন্যতম শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। মাটির নিচে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছে, যা গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরে মাওবাদীদের হাতে নিহত নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা এখন ১৮-এ পৌঁছেছে, যার মধ্যে আকাশ রাও গিরিপুঞ্জের নামও যুক্ত হলো।
মাওবাদীদের এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার যৌথভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। সেই লক্ষ্যে ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ও জঙ্গলে ব্যাপক মাওবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, সুকমা জেলার কারেগুট্টা পাহাড়ি এলাকা মাওবাদীদের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি। এই এলাকা থেকে মাওবাদীদের শিকড় উপড়ে ফেলতে প্রায় ৩ হাজার আধাসেনাকে মোতায়েন করা হয়েছে।
অভিযানে ইতিমধ্যে ৩১ জনের বেশি মাওবাদী নিহত হয়েছে। এছাড়া, মাওবাদীদের সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজুকে খতম করা হয়েছে, যার মাথার দাম ছিল ১.৫ কোটি টাকা। বর্তমানে প্রায় ২০ হাজারের বেশি যৌথ বাহিনী ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র ও তেলেঙ্গানা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি ও জঙ্গলে অভিযান চালাচ্ছে। এই অভিযান চলাকালীন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপর মাওবাদীদের হামলা অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষতি হচ্ছে।
মাওবাদীদের এই নাশকতামূলক কার্যক্রমের কারণে সুকমা ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রভাবিত হচ্ছে। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের জীবন বাজি রেখে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে মাওবাদীদের হামলা ও আইইডি বিস্ফোরণের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, এই অঞ্চলে এখনও সম্পূর্ণ শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং মাওবাদীদের কার্যক্রম এখনও সক্রিয় রয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হবে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি, মাওবাদীদের মূল ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়ে তাদের কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
সুকমা জেলার দোনদরা গ্রামে এএসপি আকাশ রাও গিরিপুঞ্জের শহিদ হওয়ার ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী এবং স্থানীয় প্রশাসন গভীর শোক প্রকাশ করেছে। শহিদ পুলিশ আধিকারিকের পরিবারকে সরকার থেকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
What's Your Reaction?






