বাংলাবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কাণ্ডারি পর্যবেক্ষণ: মমতার নির্দেশে তৈরি হচ্ছে প্রতিবাদের তরঙ্গ

১. মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বসবাসরত প্রায় ২২ লক্ষ বাংলাভাষীর বিরুদ্ধে হেনস্তার কথা তুলে এনে মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রের করা ‘নির্বিচারী’ আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানান। ২. সব মন্ত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—নিজ নিজ এলাকায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ বাড়াতে। শহর, গ্রাম—সবখানে মিছিলে নামার প্রস্তুতি নিতে হবে। ৩. আগামী ১৬ জুলাই কলেজ স্কোয়ার থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী নিজে নেতৃত্ব দেবেন মিছিল। রাজ্যের প্রত্যেক জেলা ও দিল্লিতেও একই সময় প্রতিবাদ কর্মসূচি হবে। ৪. ওড়িশা, দিল্লি এবং অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যে প্রায় ২০০–৪০০ বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিক ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে আটক/জিজ্ঞাসা-ডিটেনশন ক্যাম্পে নেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল তুলেছে—যাদের অধিকাংশের বৈধ পরিচয়পত্র রয়েছে। ৫. এই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের হয়েছে—আদালত আগামী ১৬ জুলাই শুনানি করার কথা জানিয়েছে, বক্তবের সময় প্রতিবাদ মিছিলও হবে!

Jul 15, 2025 - 12:11
Jul 15, 2025 - 12:42
 0  3
বাংলাবিদ্বেষের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কাণ্ডারি পর্যবেক্ষণ: মমতার নির্দেশে তৈরি হচ্ছে প্রতিবাদের তরঙ্গ

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভা বৈঠকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল ইস্যু উত্থাপন করেন—ভিনরাজ্যে বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষের উপর হওয়া নিপীড়ন ও হেনস্তা। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী প্রায় দেড় কোটি ভিনরাজ্যের মানুষ এখানে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করছেন, অথচ দেশের অন্যান্য রাজ্যে বসবাসকারী প্রায় ২২ লক্ষ বাংলাভাষী মানুষ নানাভাবে নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। কোথাও তাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হচ্ছে, কোথাও তাদের বৈধ পরিচয় থাকা সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে, আবার কোথাও জোর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনাগুলোকে ভাষা ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে সংঘটিত পরিকল্পিত আক্রমণ বলে অভিহিত করে বলেন, এটা সহ্য করা যায় না এবং এই ইস্যুতে তৃণমূল সরকার চুপ করে থাকবে না। তিনি মন্ত্রিসভার প্রত্যেক সদস্যকে নির্দেশ দেন যে, তাঁরা যেন নিজের নিজের এলাকায় এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ান এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। শুধু তাই নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই আগামী ১৬ জুলাই কলকাতায় এক বিরাট প্রতিবাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন, যেটি কলেজ স্কোয়ার থেকে শুরু হয়ে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত যাবে। এই কর্মসূচি রাজ্যের সব জেলাতে পালন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই তৃণমূলের প্রতিনিধি দল দিল্লির বসন্তকুঞ্জ এলাকায় গিয়ে বাংলা ভাষাভাষী ভুক্তভোগী নাগরিকদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা শুনেছেন এবং প্রতিকারের আশ্বাস দিয়েছেন। বিশেষত দিল্লি, ওড়িশা, অসমের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরণের ঘটনাগুলো বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওড়িশায় প্রায় ২০০-৪০০ বাংলাভাষী শ্রমিককে বাংলাদেশি পরিচয়ে আটক করা হয়েছে বলে তৃণমূল দাবি করেছে, যাঁদের অধিকাংশের কাছেই বৈধ আধার বা ভোটার কার্ড ছিল। এই ঘটনার বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা দায়ের হয়েছে এবং শুনানি হওয়ার কথা ১৬ জুলাই—মমতার মিছিলের দিনেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভাষাগত ও জাতিগত পরিচয়কে সামনে এনে তৃণমূল একটি শক্তিশালী জনমত তৈরি করতে চাইছে, যেখানে বাংলার মানুষের আত্মপরিচয়, মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রশ্নটি কেন্দ্রে থাকবে। বিজেপি এই ঘটনাকে ‘ভাষা রাজনীতি’ বলে ব্যঙ্গ করলেও, তৃণমূল বলছে—এটা শুধুমাত্র রাজনীতি নয়, এটা বাংলাভাষী মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি একদিকে যেমন কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা মনে করিয়ে দেবে, অন্যদিকে বাংলার মানুষের মধ্যে ঐক্য ও আত্মমর্যাদাবোধকে আরও জোরালো করে তুলবে। রাজ্যের বিভিন্ন স্তরে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মীরা ইতিমধ্যেই এই মিছিলের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শহীদ দিবস (২১ জুলাই) এবং এই প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যবর্তী সময়ে তৃণমূলের বার্তা স্পষ্ট—বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও মানুষকে অপমান করলে তার রাজনৈতিক জবাব দেওয়া হবেই। এখন দেখার বিষয়, এই প্রতিবাদের ঢেউ ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলে এবং কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্কের নতুন মাত্রা তৈরি করে কিনা।

What's Your Reaction?

Like Like 0
Dislike Dislike 0
Love Love 0
Funny Funny 0
Angry Angry 0
Sad Sad 0
Wow Wow 0
Tathagata Reporter